ক্যাপিটাল গেইন আরোপ নিয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে শেয়ারবাজার। এতে করে প্রায় প্রতিদিন সূচক এবং লেনদেনে নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে শেয়ারবাজারে টানা পতনে বিনিয়োগকারীরা বড় লোকসানের মধ্যে পড়েছেন। এর মধ্যে একটি দাতা সংস্থার পরামর্শে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্যাপিটাল গেইন (মূলধনি মুনাফা) আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এ খবরে শেয়ারবাজার চরম অস্থির হয়ে উঠেছে। এ কারণে দুইমাসের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক প্রায় ৬০০ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেনের হার ৬০০ কোটি টাকা থেকে ৩০০ কোটিতে নেমেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজার ক্রান্তিকাল চলছে। এ পরিস্থিতিতে ইনসেনটিভ না দিয়ে নতুন করের বোঝা চাপালে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আরও অনাস্থা তৈরি হতে পারে। বাজার যখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে, তখন সরকার বা এনবিআর নতুন কোনো কর আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
জানা গেছে, শেয়ারবাজার বিনিয়োগ থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৪০ লাখ টাকার বেশি মুনাফার ওপর কর আরোপের কথা ভাবছে এনবিআর। সংস্থাটি আগামী (২০২৪-২৫) অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। সেক্ষেত্রে করের হার হতে পারে ১৫ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শেই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ খবরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। অবশ্য, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ একচেঞ্জ কমিশনের (বিএসসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপর গেইন ট্যাক্স আরোপ করা হচ্ছে না। এরপরও এ নিয়ে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কারসাজি চক্র নানা ধরনের গুজব সৃষ্টি করছে। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি ৩৫ কোম্পানি বাদে সবগুলোর ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পর সূচক ৬ হাজার ৩৪৬ থেকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৬ হাজার ৭৯ পয়েন্টে নেমে আসে। এরপর আবারও বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরে। সূচক আবারও ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্টে ওঠে। এরপর বাজার হঠাৎ করে ক্যাপিটাল গেইন আরোপের খবরে বাজার চরম অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজ করছে। তারপরও বিশ্বের বড় শেয়ার মার্কেটগুলোতে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের শেয়ারবাজারও রেকর্ড উচ্চতায় অবস্থান করছে। এমনকি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে থাকা শ্রীলংকার শেয়ার মার্কেটও ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেট। এখানে সব খাতেই কমবেশি উত্থান হয়েছে। কিন্তু শেয়ার মার্কেট আরও পেছনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দেশের বিনিয়োগকারীরা এমন সময়ে শেয়ারের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন যখন অন্যান্য দেশের শেয়ারবাজার চাঙা হচ্ছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহের লেনদেনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমেছে। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এতে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা। এভাবে প্রতিদিন শেয়ারের দর কমছে ডিএসইতে। জানতে চাইলে ডিএসইর চেয়ারম্যান হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো এই মূহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি। এজন্য বিনিয়োগকারীদের বিশেষ সুবিধা দিতে ক্যাপিটাল গেইন প্রত্যাহার করা উচিত। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পুঁজিবাজারে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের ওপর ক্যাপিটা গেইনের ওপর নতুন করে কর আরোপ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হচ্ছে। বাজারসংশ্লিষ্ট তথা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ আতঙ্কের প্রভাবে মার্কেট ক্রমাগত নিম্নমুখী হচ্ছে। বর্তমানে এই ক্রান্তিকালে আমরা অনুরোধ করি বিনিয়োগকারী তথা পুঁজিবাজারের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে ক্যাপিটাল গেইনের ওপর নতুন করে কর আরোপ না করার জন্য এনবিআরের প্রতি অনুরোধ জানাই। মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, সব পলিসি অনেক বেশি পরিবর্তন হচ্ছে। ইতিবাচক পলিসি ছাড়া পুঁজিবাজারকে দাঁড় করানো কঠিন। এমন অবস্থায় মূলধনী মুনাফার ওপর কর আরোপ করা হলে বাজারে বিনিয়োগকারী আরও কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।