ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে আজ মঙ্গলবার। সকাল আটটায় শুরু হয়েছে ভোট গণনা। গত শনিবার লোকসভা নির্বাচনের শেষ বা সপ্তম দফার ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয় পশ্চিমবঙ্গে। এ রাজ্যের ৪২টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়েছে ৭ দফায়।

পশ্চিমবঙ্গের এই ৪২ আসনের ৫০৭ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে আজ। গণনা হবে ৫৫টি গণনাকেন্দ্রে। এ লক্ষ্যে গণনাকেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গণনাকেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। থাকছে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা।

ভোট গণনাকেন্দ্রে থাকছে ৪ হাজার ৯৪৪টি টেবিল। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে ৯২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই সঙ্গে রাজ্য পুলিশের ২ হাজার ৫২৫ জন সদস্য থাকছেন। পর্যবেক্ষক থাকছেন বিধানসভাপিছু ১ জন করে মোট ২৯৪ জন। পর্যবেক্ষক ছাড়া নির্বাচনী এজেন্ট বা অন্যরা মুঠোফোন নিয়ে ঢুকতে পারবেন না গণনাকেন্দ্রে। সব গণনাকেন্দ্রে নজরদারির জন্য থাকছে সিসিটিভি ক্যামেরা।

আজ অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, কীর্তি আজাদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দিলীপ ঘোষ, মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক, রাজনৈতিক নেতা সৌগত রায়, অর্জুন সিং, অভিনেতা দেব, সাবেক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মহুয়া মৈত্র, অধীর চৌধুরী, শান্তনু ঠাকুর, অভিনেত্রী শতাব্দী রায়, জুন মালিয়া, রানিমা অমৃতা রায়, অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান। তাঁরাও আজ অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।

ভোট গণনার আগেও বুথফেরত সমীক্ষা নিয়ে বিতর্ক থামেনি রাজ্যের রাজনীতিতে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া জোটের নেতা রাহুল গান্ধী বিভিন্ন সংস্থার বুথফেরত সমীক্ষাকে একবাক্যে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মমতা বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনের সমীক্ষা তো দুই মাস আগে তৈরি করেছিল বিজেপির একটি কোম্পানি। ওই সমীক্ষা ভুয়া ও ফেক।

মমতা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ভোট তো গোপনে হয়, কীভাবে তারা প্রতিটি কেন্দ্র উল্লেখ করে এই সমীক্ষা করেছে?’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের ভোটদাতাদের ভোট দেওয়ার প্রবণতা দেখে বুঝেছি, মানুষ তৃণমূলকেই ভোট দিয়েছে। তাই এই ভুয়া সমীক্ষা রিপোর্ট মানছি না। এটা মোদির তৈরি সমীক্ষা। মানুষ এই সমীক্ষাকে বিশ্বাস করে না।’

অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও একই সুরে বলেছেন, ‘এটা বুথফেরত সমীক্ষা নয়, এটা মোদিজির কাল্পনিক সমীক্ষা। এটা এক্সজিট পোল নয়, মোদি পোল, মোদি মিডিয়া পোল। ফ্যান্টাসি পোল। ইন্ডিয়া জোট এবার ২৯৫ আসনেই জিততে চলেছে।’

যদিও প্রায় সব মিডিয়া ও সমীক্ষা সংস্থা জানিয়ে দেয়, এনডিএ জোট আবার ক্ষমতায় আসছে বিপুল জয় নিয়ে। তাদের আসনসংখ্যা ৩৫০ ছাড়িয়ে যাবে। তবে এনডিএ ৪০০ আসন পার করতে পারবে না। যদিও বিজেপি নির্বাচন শুরু হওয়ার পর দাবি করে আসছিল, তারা ৪০০ আসনের বেশি আসনে জিততে চলেছে।

অন্যদিকে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, ২৯৫টির বেশি আসনে জিততে চলেছে ইন্ডিয়া জোট। বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাও বলেছেন, ৩৭০টির বেশি আসনে জিতবে বিজেপি।

পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বিজেপি, বুথফেরত সমীক্ষার প্রায় প্রতিটি সংস্থা এ ইঙ্গিত দিয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে এবার বিজেপির আসন বাড়বে। তৃণমূলের আসন কমবে। গত নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ১৮টি, তৃণমূল ২২টি আর কংগ্রেস পেয়েছিল ২টি আসন। বাম দলের ভাগ্যে কোনো আসন জোটেনি।

ভারতের সাট্টার বাজার বা জুয়ার বাজারের নেতারাও বলেছেন, এবারের নির্বাচনে মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট জিতবে ৩৫০ থেকে ৩৫৫টি আসন পেয়ে। আর বিজেপি একাই জিতবে ৩০৩ থেকে ৩০৫টি আসন পেয়ে। আর ইন্ডিয়া জোট পাবে ৮০ থেকে ৮৫টি আসন। ভারতের বৃহৎ সাট্টার বাজার রয়েছে রাজস্থানে। নাম ফলোদি বাজার।